একজন ইয়াতিমার হাফেজা হওয়ার গল্প

একজন ইয়াতিমার হাফেজা হওয়ার গল্প

একজন ইয়াতিমার হাফেজা হওয়ার গল্প: ============================ যাইতুন একাডেমি প্রতিষ্ঠার কিছু দিন পরেই রাবেয়া আপা আমাকে মেয়েদের জন্য হিফজ বিভাগ চালু করার অনুরোধ করেন। তিনি জানালেন, আমরা কতিপয় ইয়াতিম বালিকার দায়িত্ব নিয়ে কুরআনের হাফেজা বানানোর চ্যালেঞ্জ নিতে চাই। এ ব্যাপারে আপনার সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি বললাম, যাইতুন একাডেমি আপনার এই কাজের জন্য প্রস্তুত। যেই কথা সেই কাজ। আমি ফেসবুকে একটি ঘোষণা দিলাম, আমরা কিছু এতিম বালিকা নিতে চাই যাদেরকে প্রথমে হাফেজে কোরআন বানানো হবে এরপর দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত করা হবে। আমার এই পোস্টে অনেকেই সাড়া দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে আমার ছাত্র দাওয়াহ বিভাগের ফজলে রাব্বী তাৎক্ষণিক যোগাযোগ করে বললেন, ওস্তাজ আমার একটা ভাগ্নি আছে আপনার ওখানে দিতে চাই। আমি ফজলে রাব্বীকে বললাম, তোমার ভাগ্নিকে দ্রুত নিয়ে আসো। ফজলে রাব্বি ওর ভাগ্নি সোহানা আক্তার কে একদিনের মধ্যেই আমার কাছে নিয়ে হাজির। আমি রাবেয়া আপাকে মেয়েটিকে তুলে দিলাম। সোহানা আক্তার সহ মোট পাঁচজন এতিমাকে হাফেজা বানানোর চ্যালেঞ্জ নিয়ে যাইতুনের ফিমেল সেকশন পথ চলা শুরু করে। সোহানার মা বাবা কেউ নেই। ওর মা মারা যাওয়ার পরে ওর বাবা ওকে ফেলে চলে গেছে। সেই থেকে ওর নানী ওকে পেলে পুষে কুমিল্লার একটি গ্রামে হেফজ মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেয়। সোহানা সেখানে কুরআন পড়া শুরু করে। আমাদের এখানে যখন সোহানা আসে তখন তার বয়স আট বছর। কয়েক পারা কোরআন মুখস্ত করেও ফেলেছে সে। আমাদের উস্তাজগণ তার পড়া শুনে রিপোর্ট দিলেন এই মেয়েকে নতুন করে কায়দা আমপারা নাজেরা শেষ করে হিফজ দিতে হবে। আমরা তাদের কথামতো সোহানাকে নতুন করে কায়দা আমপারা তারপর হিফজ করতে দিলাম। আলহামদুলিল্লাহ মেয়েটি মাত্র এক বছর দুই মাসে কুরআনের পুরো ৩০ পারা মুখস্ত করে ফেলে। গতকালকে সোহানা আক্তার সহ আরো তিনজন ছেলে হিফজ সম্পন্ন করেছে। সোহানার হিফজ সম্পন্ন করার খবরে রাবেয়া আপার সিস্টার গ্রুপ যার পর নাই খুশি। সিস্টার গ্রুপের স্পন্সর করা প্রথম মেয়ে হাফেজা হয়েছে এই খবরে ওনারা সবাই খুশিতে আত্মহারা। রাবেয়া আপার কলিজার বান্ধবী বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর কাজিন রিনি চৌধুরী আপা অনেক গিফট নিয়ে হাজির। রাবেয়া আপা হিফয সমাপনী অনুষ্ঠানে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, "সোহানার কেউ নেই। ও আমাকে মা ডাকে। আমি ওকে পেটে ধারণ করিনি কিন্তু মনে হয় যেন ও আমার পেটেরই সন্তান। আজকে আমি অনেক খুশি। খুশির আনন্দে আমি কান্না করছি।" রাবেয়া আপার কান্নায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই কেঁদে ফেলেন। সোহানাকে যাইতুনের পক্ষ থেকে ক্রেস্ট, ফুলের তোড়া, মিসওয়াক ও অন্যান্য গিফট তুলে দেওয়া হয়। এতিমাদের মা রাবেয়া আপা তার বান্ধবী রিনি আপাকে নিয়ে তাদের প্রথম কন্যা হাফেজা সোহানাকে বরণ করতে কত কিছু যে নিয়ে আসলেন তার হিসেব নেই। সোহানাকে নিয়ে আমাদের অনেক প্ল্যান। ও যাইতুনেই থাকবে। ওকে আমরা হিফজ বিভাগের শিক্ষিকা হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সময় হলে বিয়ে-শাদীসহ আজীবন ওর দায়িত্ব যাইতুন একাডেমি অভিভাবক হিসেবে পালন করে যাবে ইনশাআল্লাহ। ডঃ মুহাম্মদ আমিনুল হক চেয়ারম্যান যাইতুন একাডেমি Zaitoon Academy أكاديمية الزيتون www.zaitoonacademy.com

Recent News